ইন্টারনেট ব্যবহার এ অজানা সব তথ্য
১.ভূমিকাঃ বিজ্ঞান এর চমৎকার এক আবিষ্কার হলো ইন্টারনেট। যা বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী এক মাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সারাবিশ্বের দেশগুলি আজ যেন নিকট প্রতিবেশী। এই ব্যবস্থা ‘বিশ্বগ্রাম’ (Global Village)ধারণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক ও বহুমুখী কাজে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে।

আধুনিক ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে বিপুলভাবে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে ইন্টারনেট।
২.ইন্টারনেট কিঃ ইন্টারনেট বিভিন্ন নেটওয়ার্ক নিয়ে তৈরি একটি জাল। এইখানে যেসকল ডিভাইস ইন্টারনেট এর সাথে যুক্ত তা সে যত দূরেই থাক না কেন তারা তথ্য আদান প্রদান করতে পারে । আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ইন্টারনেট কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি পদ্ধতি হিসেবে গড়ে উঠেছে এই সিস্টেম।
সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে যুক্ত করে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়।
সারাবিশ্বের অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, সংবাদ সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য কোটি কোটি গ্রাহক ইন্টারনেটের সাহায্যে যুক্ত হয়ে এই মহাযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এ জন্য সকল ডিভাইস প্রয়োজন মডেম এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
২.ইন্টারনেট এর ইতিহাসঃ ইন্টারনেট আধুনিক কালের আবিষ্কার। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এটি আবিষ্কার করে। যোগাযোগের গোপন এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে এটি প্রতিরক্ষা বিভাগের গবেষণাগারে টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে স্থান করে নেয়। এটি টেলিফোন লাইন নির্ভর একটি যোগাযোগ পদ্ধতি। ডেস্কটপ কম্পিউটারের আবিষ্কার হলে টেলিনেটওয়ার্কের সাথে কম্পিউটারের সংযুক্তি ঘটে। তখন এর নাম ছিল ARPANET । এক সময় কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট সারাবিশ্বে ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার ইন্টারনেটের বিপ্লবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ৪টি কম্পিউটারের সংযোগ ঘটিয়ে যে ব্যবস্থার শুরু করে, পরবর্তী তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬টিতে। ১৯৮৪ সালে মার্কিন ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি ব্যবস্থা চালু করে।
এরপর অল্প সময়ের মধ্যে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তখনও সুযোগ-সুবিধা ছিল সীমিত। সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৯০-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। অতি অল্প সময়েই তা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা শত কোটির ঊর্ধ্বে।
৩.ইন্টারনেট এর বিভিন্ন স্তরঃ ইন্টারনেট এর স্তর হলো মূলত দুইটি। যথাঃ
(ক) সারফেস ওয়েব।
(খ) ডিপ ওয়েব/ ডার্ক ওয়েব
(ক) সারফেস ওয়েবঃ মূলত ইন্টারনেট হলো (www অর্থ world wide web) যা সাধারণত বিভিন্ন ওয়েব সাইট এ যাওয়ার মাধ্যম।
ইন্টারনেট হলো কোটি কোটি ওয়েব সাইট এর নিয়ে তৈরি নেটওয়ার্ক। যেখান এ প্রবেশ করতে বিভিন্ন ব্রউজার ব্যাবহার করে থাকি।যেমন গুগল,ইয়াহু,ডাক ডাক গো,বিং ইত্যাদি। এদের সারফেস ওয়ের বলে। এক কথায় সাধারণ মানুষ যে সকল ওয়েব সাইট এক্সেস করতে পারে তাই হলো সারফেস ওয়েব।
(খ) ডিপ ওয়েব/ ডার্ক ওয়েবঃ ডিপ ওয়েব হলো এমন এক জায়গা যেখান এ গোপনীয় ভাবে সকল কাজকর্ম হরে থাকে। অসল এ এখান এ বিভিন্ন দেশ এর গোয়েন্দা সংস্থা সহ তাদের সব গোপনীয় তথ্য এখান এ রাখা হয়। করণ বলা হয় এখান থেকে তথ্য চুরি যাওয়া খুব কঠিন।
আর ডার্ক ওয়েব হল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের একটি উপাদান যা ডার্ক নেটে বিদ্যমান। আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি সেটা মাত্র পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ। এটি পাবলিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একধরনের লুকায়িত নেটওয়ার্ক। এতে প্রবেশ করতে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার, কনফিগারেশন বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।[১][২] ডার্ক ওয়েব মূলত ডিপ ওয়েবের একটি অংশ। এই অংশে সাধারন সার্চ ইঞ্জিন প্রবেশ করতে পারে না। যদিও কখনও কখনও ভুল করে “ডিপ ওয়েব” শব্দটি ডার্ক ওয়েবকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়
৪.ইন্টারনেট এর অন্ধকার জগৎঃ ডিপ ওয়েব বা ডার্ক ওয়েব কেই সাধারণত ইন্টারনেট এর অন্ধকার জগৎ বলা হায়। এখানে মূলত এই ওয়েব ড্রাগসের ব্যবসা, স্মাগলিং ও চুরি করা ব্যক্তিগত তথ্য (ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) কেনা-বেচা করার সুপার মার্কেট। অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট-এর মত কেনা-বেচা করার ওয়েব সাইট ডার্ক ওয়েবেও আছে এবং জিনিস কেনার পর রেটিং দেওয়ারও ব্যবস্থা সেখানে আছে।
২০১২ সাল পর্যন্ত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে ১৭ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ব্যবসা হলেও ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন হচ্ছে, তিন বছরের মধ্যে প্রায় ১০ গুণ ব্যবসাবৃদ্ধি ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে হচ্ছে কীভাবে? উত্তর একটাই, ‘রেড কর্নার’ বা ‘রেড রুমের’ জন্য।
কী এই রেড কর্নার? আপনি হয়তো বলিউডের ‘লাক’ বা ‘টেবল ২১’ সিনেমাটি দেখেছেন, সেটাই ডার্ক ওয়েবের রেড কর্নার। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, লাইভ বেটিংয়ের মাধ্যমে খুন বা রেপ করা এই রেড রুমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এখানে কোটি কোটি টাকার বেটিং লাগানো হয়, অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে কাউকে রেপ বা খুন করার জন্য বা দেহের কোনও অংশ কেটে বাদ দেওয়ার জন্য।
সাধারণত বিকৃত মানসিকতার বিলিয়নিয়াররা রেড রুমের কাস্টমার। অনুমান করা হয়, ২০০০ সালে জাপানে রেড রুম অ্যানিমেশনের মাধ্যমে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। তাছাড়াও আরও অনেক অপরাধমূলক কাজ করা হায়ে থাকে এাখনা এ।
ডার্ক ওয়েবে যা তথ্য থাকে, তা কোনও সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্স করতে পারে না, তাই সহজে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করা যায় না। মূলত এখানে সমস্ত তথ্য এনক্রাইপ্ট অবস্থায় থাকে, এই পৃথিবীর মাত্র ৬ শতাংশ তথ্য এই ডার্ক ওয়েব বা ডার্ক নেটে আছে। বিশেষ কিছু ব্রাউসার ছাড়া ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ বালির মধ্যে পোস্তর দানা খোঁজার মতোই কঠিন কাজ। তাই প্রকৃত অপরাধীর খোজ পাওয়া যায় না।
(৫) ইন্টারনেট এর অজানা তথ্যঃ ইন্টারনেট এর জনক হলো ভিনটন জি কার্ফ ।
ইন্টারনেট এর সবচেয়ে বেশি গতি হলো নাসাতে
যার গতি সেকেন্ড এ 91 gbps
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ফিলিপিন্স একমাত্র দেশ যেখানে সবচেয়ে ধীর গতির ইন্টারনেট গতি রয়েছে: 3.54 Mbps.
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, যদি একদিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে পরের দিনের জন্য 196 বিলিয়ন ইমেল এবং 3 বিলিয়ন গুগল সার্চ অপেক্ষা করবে।
ফেসবুক যখন প্রায় 1 বিলিয়ন ডলারে ইনস্টাগ্রাম কে কিনে ছিলো , তখন ইনস্টাগ্রাম কোম্পানি তে মাত্র 13 জন কর্মচারী ছিল।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স এবং টুইটার তিনটিতে একসাথে যে পরিমান ট্রাফিক বা ভিসিটর আসে তার থেকে অনেক বেশি ট্রাফিক আসে অ্যাডাল্ট সাইট গুলিতে।
ব্রিটেনে প্রায় 9 মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক আছে যারা কখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি।
সারা পৃথিবীতে ১.৭ বিলিয়ন ওয়েব সাইট রয়েছে।
৬.ইন্টারনেট এ আসলেই কি আমরা নিরাপদঃ
ইন্টারনেট এ আমরা নিরাপদ না। কারণ একজন হ্যকার এর সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন যে এমন কেনো সার্ভার নেই যা হ্যাক করা অসম্ভব।
নাসা, গুগল সহ সকল বড় বড় কোম্পানির ওয়েব সাইট হ্যাক করা হয়েছিল। তাই আমারদের কিছু জিনিস মাথায় রাখা উচিত যাতে করে আমাদের তথ্য হ্যাক হওয়া থেকে বাচা যায়। যেমন নিরাপদ ব্রাউজার ব্যাবহার করা। ভি প এন ব্যবহার করা।
ইত্যাদি।
৭.ইন্টারনেট এর নৈতিক দিকঃ ইন্টারনেট আমাদের সমাজিক, প্রত্যহিক জীবনের একটি অংশ। দিন যতো যাবে মানুষ ইন্টারনেট এ তত নির্ভরশীল হবে। আমাদের অফিস এর কাজকর্ম, ব্যবসা-বানিজ্য, পড়ালেখার জন্য ইত্যাদি কাজ এ ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে এর ব্যাবহার বেশি হয় সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার থেকে মহাকাশ গবেষনা সবই এখন ইন্টারনেট নির্ভর।
৮.ইন্টারনেট এর অনৈতিক দিকঃ যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা সচেতন না হই। ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজের সঠিক পরিচয় গোপন করেন এবং নিজেকে বড় কোনো ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করেন। গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের কাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সহজেই নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারে বলে, যে কাউকে হুমকি দিতে পারে। মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ভুয়া সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেপওয়ার মতো অপরাধ অনায়াসেই করতে পারে।
এভাবে পরিচয় গোপন করার ফলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায় অনেকের মধ্যে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং বিষয়গুলো সমাজের জন্য সুখকর নয়
৯. সতর্কতা/উপসংহারঃ ইন্টারনেট এমন এক জিনিস যা আমাদের দৈনদিন জীবন এর এক অংশে পরিনত হয়েছে। ইন্টারনেট থেকে অনেক কিছু শিখা যায়। এর মধ্যে ভালো খারাপ উভয়ই রয়েছে। আমাদের উচিত ভালো দিক গুলো আয়ত্ত করা। ইন্টারনেট এ সাবধান এ নিজের তথ্য আদার প্রদান করা। নিজের চেনা মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে নিজের ছবি শেয়ার না করা ইত্যাদি দিক গুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট এ নিরাপদ থাকতে পারবো।
Gd