অনলাইনে আয় বর্তমানে খুবই প্রচলিত এবং লাভজনক উপায়। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষ অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই ইনকাম করছে লাখ লাখ টাকা ।
তবে অনেকের মনে এখনও দ্বিধা কাজ করে এই অনলাইনে ইনকাম করা নিয়ে। যারা এখনও এমন দ্বিধায় ভুগছেন, তাঁদের বলবো আপনারা এখনও সেই মান্ধাতার আমলেই পরে আছেন।
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এই অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে আয় করছেন। আমি নিজেই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। আপনি নিশ্চিত থাকুন, অনলাইন থেকে আয় করা সত্যিই সম্ভব।
আপনি যদি অনলাইন থেকে আয় করতে চান তবে আপনিও পারবেন। কিন্তু তার জন্য আপনার কিছু বিষয়ের উপর দক্ষতা থাকা লাগবে। চিন্তার কিছু নেই। আমরাই এই আর্টিকেলে অনলাইনে ইনকাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে, অনলাইনে আয় করার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
অনলাইনে আয় করার ৫ টি সহজ উপায়
বর্তমানে অনলাইন থেকে ইনকাম করার অনেক উপায় রয়েছে। আপনি এতো এতো উপায় দেখে দ্বিধায় পরে যাবেন, যে কোনটা আপনি বেছে নিবেন। চিন্তার কিছু নেই। আমরাই আপনাকে সঠিক পথটা দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
এখন চলুন অনলাইন থেকে আয় করার কয়েকটি সহজ এবং লাভজনক উপায় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক;
১. ব্লগিং করে ইনকাম
অনলাইনে আয় করার কথা উঠলে প্রথমেই যার কথা মনে হয় তা হলো ব্লগিং। বর্তমানে অনলাইন থেকে ইনকামের সবচেয়ে সহজ এবং লাভজনক উপায় হচ্ছে এই ব্লগিং।
ব্লগিং করার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে আজীবন ইনকাম করতে পারবেন। আপনি যদি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন এবং লেখালেখির উপর ভালো একটা দখল থাকে, তবে চোখ বন্ধ করে ব্লগিং করা শুরু করে দেন। আমি হলফ করে বলতে পারি শুধুমাত্র এই গুণটা থাকলেই আপনি একজন সফল ব্লগার হতে পারবেন।
ব্লগিং করতে হলে আপনার প্রয়োজন পরবে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগয়ের। বর্তমানে এমন অনেক সাইট রয়েছে যেখানে আপনি ফ্রিতেই একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারবেন।
এরপর আপনার কাজ হলো আর্টিকেল লিখা। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। চলুন জেনে নেই সে সম্পর্কে ;
- সম্পূর্ণ ইউনিক এবং কপিরাইট ফ্রি আর্টিকেল লিখতে হবে।
- এমন বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করবেন, যা মানুষের উপকারে আসে।
- মানুষের পড়ার চাহিদা বেশি এমন বিষয়ে লিখবেন।
- এসইও অপটিমাইজড আর্টিকেল লিখার চেষ্টা করবেন।
- শব্দসংখ্যা ৫০০ এর উপরে রাখার চেষ্টা করবেন। শব্দসংখ্যা যতো বেশি হবে ততোই ভালো। তবে শব্দ সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে আবার অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা টেনে আনবেন না যেনো।
আপনি নিয়মিত ইউনিক এবং কপিরাইট ফ্রি আর্টিকেল পাবলিসড করতে থাকবেন। আর সাথে গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করে রাখবেন। আপনার ওয়েবসাইটে ভালো পরিমাণে ট্রাফিক বা ভিজিটর হয়ে গেলেই আপনার ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আয় হবে আপনার।
২. ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়
বর্তমানে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের পরের অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন। এর কারণ কী? এর কারণটা হচ্ছে মানুষ তাঁদের চাহিদামতো যেকোনো ধরনের ভিডিও সহজেই ইউটিউবে পেয়ে যাচ্ছে। এমন কী বিষয় আছে, যে বিষয়ের উপর ইউটিউবে ভিডিও নেই?
বিনোদন বলুন কিংবা শিক্ষামূলক ভিডিও প্রায় সব ধরনের ভিডিও নিয়েই এই ইউটিউবের পথ চলা। তবে এই যে ইউটিউবে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের এতো আনাগোনা, এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে আয় করছেন ইউটিউব থেকে।
আমার ছোট ভাই, মোবাইলে গেম খেলায় তার এতো আগ্রহ। তবে কিছুদিন পূর্বে দেখলাম, সে এই গেম নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে ফেলেছে। আর তার মাধ্যমে এখন মোটামুটি ভালোমানের আয় করতেছে।
আপনিও চাইলেই সহজে ইউটিউব ভিডিও বানিয়ে আয় করতে পারবেন। এর জন্য আপনার কোনোপ্রকার ইনভেস্টেরও প্রয়োজন নেই। আপনি ফ্রিতেই একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলে ফেলতে পারবেন।
এরপর আপনার কাজ হলো আপনার চ্যানেলটিতে ভিডিও আপলোড দেওয়া। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক
সে-সম্পর্কে ;
- আপনি আপনার চ্যানেলটিতে সম্পূর্ণ ইউনিক ভিডিও আপলোড দিবেন। অন্য কারো ভিডিও, এমনকি ভিডিওর মিউজিক, ছবি কোনো কিছুই কপি করবেন না।
- ভিউয়ার বা দর্শকদের আগ্রহ কাজ করে এমন বিষয়ে ভিডিও বানাবেন। এমন বিষয়ে ভিডিও বানাবেন যার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা রয়েছে।
- এমন বিষয় নিয়ে ভিডিও বানাবেন যে বিষয়ে আপনি দক্ষ কিংবা যে বিষয়ে আপনার পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে।
- দক্ষতার সাথে নিজের পছন্দকে প্রায়োরিটি দিবেন। যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ কাজ করে এমন বিষয়ে ভিডিও বানাবেন।
- বিনোদন, গেমিং, ভ্রমণ, রান্নার রেসিপি ইত্যাদি যে বিষয়েই ভিডিও বানান না কেনো, ভিডিও সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করবেন। উপস্থাপনা ভালো হলে ভিডিওর ভিউয়ার খুব তাড়াতাড়ি বাড়বে।
আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিতে কয়েকদিন পর পর নিয়মিত ইউনিক ভিডিও আপলোড দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপর গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করবেন। গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেয়ে গেলে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি থেকে ইনকাম হবে।
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ উপায় হচ্ছে এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। বর্তমানে প্রায় মানুষই এই উপায়ে ঘরে বসে আয় করছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে বুঝায় কোনো ই-কমার্স সাইটের পণ্য প্রমোট করে ঐ পণ্যের বিক্রি করিয়ে দেওয়া।
অ্যামাজন, আলীবাবা ইত্যাদি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? আপনার কাজ হলো এই সাইটের কোনো পণ্যকে বিভিন্ন উপায়ে প্রমোট করে পণ্যের বিক্রি করিয়ে দেওয়া। বিনিময়ে ঐ সাইটগুলো থেকে আপনাকে কমিশন দেওয়া হবে।
এখন আসি এই পণ্যের প্রচারণা কী করে করবেন? আপনার যদি কোন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট / ব্লগ কিংবা ইউটিউব চ্যানেল থাকে তবে আপনি সেখানে ঐ পণ্যের লিংক শেয়ার করতে পারেন। কিংবা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও আপনি এই কাজটি করতে পারবেন।
যখন আপনার শেয়ার করা লিংকে কেউ প্রবেশ করে ঐ পণ্যটি কিনবে, তখনই ই-কমার্স সাইট থেকে আপনাকে কমিশন দেওয়া হবে। তাহলে বুঝলেন তো, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে আয় করবেন?
৪. আর্টিকেল / কন্টেন্ট রাইটিং
আপনি কী লেখালেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির প্রতি অন্যরকম একটা আবেগ কাজ করে? তাহলে আর দেরি কেন? এখনই শুরু করে দিন আর্টিকেল লিখা।
আপনি হয়তো ভাবছেন, পৃথিবীতে এতো এতো রাইটার থাকতে আমি কাজ পাবো কী? জি, অবশ্যই পাবেন। মানুস প্রতিদিন গুগলে নিত্যনতুন বিষয় জানার জন্য সার্চ করে থাকে।
আর বিভিন্ন ব্লগাররা প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য কন্টেন্ট রাইটারকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন, আর্টিকেল লেখার জন্য। তাই এই ক্ষেত্রে আপনার কাজের অভাব হবে না।
অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এটি। তাই আপনার যদি লেখালেখি করার ধৈর্য্য থাকে, তবে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে ভাবতে পারেন।
তবে যে বিষয় নিয়ে লিখেন না কেনো, লিখার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে রিসার্চ করে তবেই লিখবেন।
৫. অনলাইন ছবি বিক্রি
আমরা প্রত্যেকেই মোটামুটি ছবি তুলতে অভ্যস্ত। কোথাও ঘুরতে গেলে, কিংবা যেকোনো অনুষ্ঠানে, মুঠোফোনে ছবি তুলে সেই মূহুর্তগুলোকে ধারণ করে রাখা আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস।
অনেকে আবার শখের বসেও ছবি তুলে। তবে শখের বসেই হোক কিংবা যেকোনো কারণেই হোক, আপনাদের যদি ভালো মানের ছবি তোলার অভিজ্ঞতা থাকে তবে আপমার জন্য একটা সুখবর আছে।
বলুন দেখি, সুখবরটা কী? অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয়। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? এটা একদম সত্যি। আপনি চাইলেই আপনার তোলা সুন্দর ছবিগুলো অনলাইনে বিক্রি করে আয় করতে পারবেন।
বর্তমানে এমন অনেক জনপ্রিয় প্লাটফর্ম রয়েছে যারা আপনার তোলা ছবিগুলো কিনে নিবে। তাহলে আর দেরি কেনো? আজই নিজের ফটোগ্রাফিটাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে আয় করে ফেলুন খুব সহজে।
শেষ কথা
কর্মজীবী, গৃহিণী কিংবা শিক্ষার্থী যে যে পেশাতেই আছে, তার পাশাপাশি অনলাইনে আয় করে নিজেদের বাড়তি খরচটুকু জুগিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। এই অনলাইনে ইনকামকে অনেকে আবার নিজেদের ক্যারিয়ার হিসেবেই গ্রহণ করে ফেলছেন।
দিন দিন তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে এই অনলাইন থেকে ইনকাম সূদুর ভবিষ্যতে মানুষের মূল লক্ষ্য হবে বলে মনে করা হয়।
অনলাইন থেকে যেকেউ চাইলেই আয় করতে পারবে। তবে এর জন্য দরকার নিজের ইচ্ছাশক্তি, যেকোনো বিষয়ে দক্ষতা।
আমরা এই আর্টিকেলে অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো তুলে ধরেছি। এর জন্য আপনার কোনো ধরনের বিনিয়োগ করারও প্রয়োজন পরবে না।
আপনি যদি অনলাইন থেকে ইনকাম করার কথা ভেবে থাকেন, তবে উপরের যে বিষয়টিতে আপনার আগ্রহ কাজ করে সে বিষয়ে ধারণা নিয়ে শুরু করে দিন আপনার অনলাইন আয়।
Good. And nice ❤❤
Thank you. Stay tuned.
সুন্দর
ধন্যবাদ