ইন্টারনেট আমাদের সভ্যতার জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ। কারণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তি এবং সভ্যতা এতো দূর পর্যন্ত এসেছে। বিশ্বায়নের এই যুগে মানব সভ্যতার উন্নত বিকাশ সাধনে ইন্টারনেট এর অবদান অপরিহার্য। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কম্পিউটারকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে যুক্ত করে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা ই ইন্টারনেট।
অন্যভাবে বলা যায়, ইন্টারনেট হলো কম্পিউটারের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক । ব্যক্তিগত বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে অতি দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন এবং ছবিসহ যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
তাই সারা বিশ্বের অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংবাদ সংস্থা, গবেষণাগার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে এ যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠান বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
আজ আমরা সেই ইন্টারনেটের কিছু অজানা তথ্য জানবো।
প্রথম ওয়েবসাইট:
আশ্চর্যের বিষয় হল ইন্টারনেটে বানানো প্রথম ওয়েবসাইট আজও আছে। ১৯৯১সালে ৬ই আগস্টে তৈরি করা এই ওয়েবসাইটটি এখনো বন্ধ করা হয়নি। তবে অরিজিনাল ডোমেইনটি নেই। computer at the European organisation for nuclear research, CERN টিম বার্নার্সের বানানো পৃথিবীর প্রথম ওয়েবসাইটটি তাদের অফিসিয়াল ডোমেইনের সঙ্গে সংযুক্ত করে সংগ্রহ করে রাখে।
প্রথম ওয়েবক্যাম:
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম ওয়েব ক্যাম বানানো হয়েছিল যার যার কারণ ছিল একটি ট্রোজেন কফি পটকে মনিটর করা। ভিডিও ফিড হিসেবে একটি ১২৮ গুন ১২৮ গ্রেস্কেল পিকচার রাখা হয়েছিল।
প্রথম ইমেইল:
ইন্টারনেটে প্রথম ইমেইল আবিষ্কার করেন যুক্তরাজ্যের প্রোগ্রামার রে টমিলিনসন। আর পৃথিবীর প্রথম ইমেইলটি ও তিনি পাঠিয়েছিলেন তারই প্রোগ্রামার এক বন্ধুর কাছে.
ইন্টারনেট লোডশেডিং:
আমরাতো দিনের যেকোনো সময় ইন্টারনেট চালাতে
পারে কিন্তু এটা ভেবে দেখেছি কি সব ধরনের ইলেকট্রিক জিনিসটা চালাতে কারেন্ট লাগে তাহলে ইন্টারনেটে কি কারেন্ট লাগে? তাহলে ইন্টারনেটে কি লোডশেডিং হয় না? সারা বিশ্বে ইন্টারনেট চালাতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন হর্সপাওয়ার এনার্জি লাগে আর এই শক্তির যোগান অনবরত হয়ে থাকে তাই এখানে লোডশেডিং এর কোন প্রশ্নই আসে না।
ইন্টারনেট স্পিড:
আচ্ছা আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড কত আর যদি ওয়াইফাই চালিয়ে থাকেন তাহলে ওয়াইফাই এর স্পিড কত? আপনার উত্তর ১ থেকে ২০ এমবিপিএস হয়ে থাকবে। জানেন কি এই ইন্টারনেট স্পিড সর্বোচ্চ কত হয়ে থাকবে।
ইমেইল:
ইন্টারনেটে প্রতি মিনিটে ২০৪ মিলিয়ন ইমেইল আদান-প্রদান হয়ে থাকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই ২০৪ মিলিয়নের প্রায় ৫০% থাকে স্পার্ম ইমেইল। আর এটা কি জানেন একটা ইমেইল আদান-প্রদান করতেই লেগে যায় ২০০ বিলিয়ন ইলেকট্রন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭.৩ বিলিয়ন:
পৃথিবীর প্রায় ৭.৩ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অবাক করা ব্যাপার হল এর মধ্যে প্রায় ৫০% এশিয়ার মানুষ। সবথেকে অবাক করা বিষয় হলো ইন্টারনেট যদি একদিনের জন্য বন্ধ থাকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইমেইল এবং ৫ বিলিয়ন গুগোল তথ্য ওয়েটিং এ থাকবে।
৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত:
৭.৩ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এটা জেনে আপনি হয়তো অবাক হয়েছেন কিন্তু এটা জানেন কি পৃথিবীর ৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতিসংঘের রিপোর্ট থেকে জানা যায় দরিদ্র দেশ এবং বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু প্রায় চার বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সবচেয়ে বেশি ব্যবহার:
যদিও চায়নাতে ফেসবুক ইউটিউব থেকে শুরু করে অনেক ওয়েবসাইটকে তাদের সরকার ব্যান করেছে। কিন্তু আপনি এটা জানলে অবাক হবেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্রাউজ করা হয় এই চায়নাতেই।প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ এখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর। এর ফলে তারা নিজের উপরেই কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে।
ইন্টারনেট ট্রাফিক:
ধরুন আজকে আপনি একটি ওয়েবসাইট খুললেন এবং কালকে দেখলেন আপনার ওয়েবসাইটে মোট ভিসিটর ১ লাখ। আপনি দেখে হতভম্ব হয়ে যাবেন আর ভাববেন এটা কিভাবে সম্ভব।
আপনি তো কোন প্রচার করেন নি তাহলে বুঝে নিতে হবে এটা কোন মানুষের কাজ না। এটাকে বলা হয় বট এন্ড ম্যালওয়্যার ট্রাফিক। কিছু অসাধু মানুষ এমন কিছু সফটওয়্যার বানিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে যারা বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়ায়। এক গবেষণায় জানা যায় ৬১% ওয়েবসাইটের ট্রাফিক এই বট এ্যাণ্ড ম্যালওয়্যার দিয়েই হয়ে থাকে।
ইন্টারনেট ও WWW:
আপনি কি ইন্টারনেট বলতে www কে মনে করেন? আসলে অনেকে মনে করে এই দুইটা সেম কিন্তু এই দুইটার মধ্যে আসলে আকাশ পাতাল পার্থক্য। ইন্টারনেট হচ্ছে অনেকগুলো কম্পিউটার এর জাল এবং www হচ্ছে একটি ব্রিজের মত যার মাধ্যমে আপনি কোন ইনফরমেশন নিতে পারেন। অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং বিভিন্ন ওয়েবে প্রকাশ করতে পারেন।
ইন্টারনেটের প্রথম ছবি:
আপনি কি জানেন ইন্টারনেটে প্রথম কোন ছবি আপলোড করা হয়? এটি ছিল একটি জোকস বেন্ড অফ উইমেন যেটা আপলোড করেছিল সার্নের নিউক্লিয়ার রিচার্জ টিম।
আরো কিছু ছোট তথ্য:
#ইন্টারনেটের প্রথম আইডিয়া যার মাথায় আসে তার নাম হলো টিম বার্নার্স লি।
#ইন্টারনেটের জনক বলা হয় ভিনটন জি কার্ফ কে।
# ১৯৬৯ সালে পৃথিবীতে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয়।
#১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট আসে।
#ই-মেইল এর জনক বলা হয় রে টমলিসন কে।
#ইন্টারনেটের প্রথম নাম ছিল আর্পানেট।
বন্ধুরা ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
ভালো
wow